- নরসিংদীতে চরম জন দুর্ভোগের শিকার- মুক্তির সেতুবন্ধন “”সেতুর”” অভাবে::
হারুনূর রশিদ :
নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ যুগের পর যুগ ধরে সেতু না থাকায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। মেঘনা নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত এই চরাঞ্চলের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম নৌপথ। জেলা শহরের দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার হলেও যাতায়াতে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। এতে করে বাড়ছে জীবনঝুঁকি, দুর্ঘটনার হার ও আর্থিক খরচ।
স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়নের অন্তর্গত ৯টি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। কৃষক, জেলে, শিক্ষার্থী ও রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম ও অতিরিক্ত কচুরিপানার সময় নৌযাত্রা হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী।
আলোকবালী গ্রামের বাসিন্দা রুবেল আহমেদ বলেন, “সেতু না থাকায় এক ঘণ্টার পথ কচুরিপানার জন্য ৩-৪ ঘণ্টায় পার হতে হয়। রোগীকে সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া যায় না, অনেক সময় গর্ভবতী নারী নৌকাতেই সন্তান প্রসব করেন।”
এক হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বাখরনগর গ্রামের আহমদ মিয়া বলেন, “গত ১০ জানুয়ারি রাতে আমার বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়। কুয়াশা আর নদী পারাপারে জটিলতার কারণে দ্রুত হাসপাতালে নিতে পারিনি। নরসিংদী সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকায় রেফার করার পর আমরা যখন হাসপাতালে পৌঁছাই, মেইন গেটেই বাবার মৃত্যু হয়। সময়মতো চিকিৎসা পেলে হয়তো বেঁচে যেতেন।”
এছাড়াও গত ২২ এপ্রিল স্থানীয় ইউপি সদস্য আমির সরকারকে কুপিয়ে জখম করার পর নদী পার হতে দেরি হওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন আলোকবালীর যুবক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, “সেতু না থাকায় শুধু মানুষের দুর্ভোগ নয়, প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণও দুর্বল। মাদক, সন্ত্রাস, অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েই চলেছে।”
এ ব্যাপারে নরসিংদী এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ফুলকাম বাদশা বলেন, “আমি নিজে ওই এলাকায় গিয়ে কচুরিপানায় তিন ঘণ্টা আটকে ছিলাম। বিষয়টি আমি সরাসরি উপলব্ধি করেছি। ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। আলোকবালী থেকে করিমপুরের শ্রীনগর পর্যন্ত ৩০০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমা জাহান সরকার বলেন, “চরাঞ্চলের মানুষরা সত্যিকার অর্থেই অবহেলিত। আমি নিজে নৌপথে গিয়ে পরিস্থিতি দেখেছি। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে, এখন দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
একটি মাত্র সেতুর অভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষিপণ্য বিপণন, প্রশাসনিক সেবা এবং নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত আলোকবালীর অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। তাই, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেতু নির্মাণ করে তাদের দীর্ঘদিনের জনদুর্ভোগ থেকে মুক্তির সেতুবন্ধ হিসাবে সেতু নির্মানের দাবী করে আসছে উক্ত এলাকার স্থানীয় জনগণ।